পবিত্র রমজান মাস আসন্ন। সারাদেশের ন্যায় ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের বাজারে ইতোমধ্যে রমজানের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
অন্যান্য মুসলিম দেশে রমজান মাসে যখন জিনিসপত্রের দাম কমে, এই দেশে তখন বাড়ে। যারা বাড়ায় তারাও মুসলিম।
সূত্র জানায়, রমজানের প্রায় দেড় মাস বাকি থাকলেও সংযমের ওই মাসটি ঘিরে প্রয়োজনীয় বেশকিছু পণ্যের দাম এরইমধ্যে চড়তে শুরু করেছে। অন্য বছরগুলোতে সবজির দাম শীতের ভরা মৌসুমে কম থাকলেও এবারের বাজারের ছবি ভিন্ন। সব সবজির দাম এবার বেশি। চাল-ডাল, পেঁয়াজসহ আরও কিছু পণ্যের দর আগে থেকেই লাগামহীন। নিত্যপণ্যের দর অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় ক্রেতারা পড়েছেন মহাবিপদে। এমনিতেই করোনার শুরু থেকে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির। এই অস্থিরতা রমজানে চরম পর্যায়ে উঠতে পারে বলে শঙ্কা করছেন অনেকে।
নিত্যপণ্যের বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি কমমূল্যে জিনিসপত্র বিক্রি করা হবে বলে জানা যায়। কিন্তু চাহিদার তুলনায় তা খুবই নগন্য। ফলে বাজার স্থিতিশীল রাখতে টিসিবি খুব একটা ভূমিকা রাখতে পারবে কিনা তা নিয়ে আছে শংকা।
কাঁচাবাজারে আসা ক্রেতা মাজহারুল ইসলাম
বলেন, ‘শীতকালীন শাক-সবজির দাম ১০-১৫ টাকা বেড়েছে। সব নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। গরুর মাংসের দাম বৃদ্ধি দেখে মুরগি কিনতে গেলাম, সেখানেও দেখি চড়া দাম।তারপর ভাবলাম ডিম কিনব। কিন্তু দোকানে গিয়ে দেখি ফার্মের মুরগির ডিম ডিম ৪০ টাকা হালি,তাই আর দেশি ডিমের দাম জিজ্ঞেস করতে সাহস পাইনি।উপায় না পেয়ে শাক-শুঁটকি কিনে নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি।’
মঙ্গলবার ও বুধবার উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা কেজি। বোতলজাত তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায়। নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশিতে বিক্রি হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। পাঁচ লিটারের বোতল কিনতে দিতে হচ্ছে ৭৪৫ থেকে ৮০০ টাকা।বিক্রেতারা জানান, যাঁদের কাছে আগের কেনা তেল রয়েছে, তাঁরাই কিছুটা কমে বিক্রি করছেন। নতুন কেনা বোতল বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
টিসিবির হিসাবে দেখা গেছে, টিসিবির সয়াবিন তেল ১১০ টাকা ও খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়। এ ছাড়া ৬৫ টাকার ডাল খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকায়। এ ছাড়া ৫৫ টাকার চিনি খোলা বাজারে ৮০ টাকা, ৩০ টাকার চাল খোলা বাজারে ৫০ টাকা ও ২৩ টাকার আটা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। কিছু দোকানে তেলের বোতলের গায়ে মূল্য লেখা থাকলেও দাম চাওয়া হচ্ছে বাড়তি।
ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, ভরা মৌসুমেও অনেক সবজি বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।শিম ৪০-৫০ টাকা, ফুলকপি ৪০-৫০ টাকা ও কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহ দু-এক আগেও যা ছিল ২৫-৩০ টাকা কেজি। পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫-১০ টাকা। তবে নতুন আলুর দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
ঈশ্বরগঞ্জ কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিনিয়ত বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। আমরা বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করছি। এ কারণে সবজি কম বিক্রি হচ্ছে। কাস্টমারও রাগান্বিত হয়ে সবজি না কিনেই বাড়ি যাচ্ছে।
রুহুল ট্রেডার্সের মালিক নূরুল হুদা বলেন, ‘খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। আমরা পাইকারিভাবে ১৫৮ টাকা করে কেনা তেল ১৬০-১৬৫ টাকা কেজি ধরে সয়াবিন তেল বিক্রি করছি। সীমিত লাভে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছি। মসুর ডালের দামও ১০ টাকা বেড়েছে।’
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ
হাফিজা জেসমিন বলেন, ‘বাজার সহনশীল করার লক্ষ্যে আমরা বাজার তদারকি শুরু করব।আগেও আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালতে পরিচালনা করেছি।এখন আবারও অচিরেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দামে তেল বিক্রি করা যাবে না। প্রতিটি দোকানে মূল্যতালিকা টানাতে হবে।’ নিয়মিত বাজার মনিটরিং করলে আশা করছি জনগণ তার সুফল পাবে ও স্বস্তি ফিরবে বাজার গুলোতে।
মোঃ ইসহাক
ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ
০১৯১০২০৭৪৫৪
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।